ধরুন, আপনি এক লোকের কাছে ৫ লাখ টাকা পাবেন। সেই টাকা পরিশোধের জন্য তিনি আপনাকেকে ৫ লাখ টাকার একটা চেক দিলো। কিন্তু ব্যাংক 'অপর্যাপ্ত তহবিল'( টাকা নেই) বা অন্য কোন কারনে চেক ডিসঅনার করল মানে ব্যাংক আপনাকে টাকা দিলো না।
চেক প্রদানের তারিখ হতে (চেকের উপর যে তারিখ থাকে) ৬ মাসের মধ্যে আপনি টাকা তুলতে গেলেন কিন্তু ব্যাংক বললো চেক দাতার একাউন্টে টাকা নেই। চেক দাতার কাছে বারবার টাকা চেয়েও লাভ হচ্ছে না।
আবার আপনি ব্যবসায়িক লেনদেন করছেন। বাকীতে লেনদেন করার জন্য গ্রাহকের কাছ থেকে ফাকা চেক স্বাক্ষর করে নিলেন।
ব্যাংকে গিয়ে টাকা উত্তোলনের জন্য চেকটি কাউন্টারে দিন। ব্যাংক কর্মকর্তা আপনি যে একাউন্টের বা হিসাবের চেক দিয়েছেন, সেই একাউন্টে যে পরিমান টাকার চেক দিয়েছেন, সেই পরিমান টাকা থাকলে, আর চেকের স্বাক্ষর ঠিক থাকলে আপনাকে টাকা দিয়ে দেবেন। তাহলে, আর আপনার চেক ডিজঅনার করার প্রয়োজন নাই।
আর যদি যে হিসাবের চেক দিয়েছেন, সে হিসাবে বা একাউন্টে টাকা না থাকে বা যে পরিমান টাকার চেক দিয়েছেন, সেই পরিমান টাকা না থকে, তবে ব্যাংক কর্মকর্তা আপনাকে বলবে যে, একাউন্টে টাকা নাই।
ব্যাংক কর্মকর্তা যখন বলবে যে, একাউন্টে এই পরিমান টাকা নাই , তখনই কেবল চেক ডিজঅনার করার প্রশ্ন আসে। চেক ডিজ অনার করার জন্য আপনাকে ব্যাংক শাখা ব্যবস্থাপকের কাছে গিয়ে চেক ডিজঅনার করার বিষয়টি অবগত করুন।
শাখা ব্যবস্থাপক প্রয়োজনীয় কাজকর্ম বা পদ্ধতি সেরে আপনাকে চেক ডিজঅনার করে দিবেন।
এরপর আপনার চেক ডিজঅনার করার মামলার কাজ শুরু করতে হবে।
চেক ডিজঅনার করার কিছু শর্ত আছেঃ
১. চেকের উপরে যে তারিখ লেখা আছে, সেই তারিখ হতে ০৬ (ছয়) মাসের মধ্যে আপনাকে চেক ডিজঅনার করাতে হবে।
২. ব্যাংক হিসাবে পরিমান মতো টাকা থাকলে আপনি চেক ডিজঅনার করাতে পারবেন না।
৩. ব্যাংকিং সময়ের মধ্যে আপনাকে চেক ডিজঅনার করাতে হবে।
চেক ডিজঅনার মামলায় ০১(এক) বছর মেয়াদের কারাদন্ড বা চেকে লিখিত অংকের ০৩ (তিন) গুণ অর্থদন্ড অথবা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবে।
হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন (Negotiable Instrument Act) ১৮৮১ এর ১৩৮ ধারা মোতাবেক চেক ডিজঅনার মামলা করতে হয়।
১. প্রথমে আপনাকে ব্যাংকে গিয়ে চেক ডিজঅনার করে নিয়ে আসতে হবে।
২. এরপর চেকের টাকা পরিশোধের জন্য ৩০ (ত্রিশ) দিন সময় দিয়ে উকিল নোটিশ বা লিগ্যাল নোটিশ দিতে হবে।
৩. উকিল নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে, পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে।
১. যে ব্যক্তিকে নোটিশ দেওয়া হচ্ছে, তাকে সরাসরি নোটিশ প্রদানের মাধ্যমে।
২. উক্ত ব্যক্তির সাধারণ বা সর্বশেষ জ্ঞাত আবাসস্থলে বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রেজিষ্ট্রিকৃত ডাকযোগে প্রাপ্তি স্বাকীরপত্র (রেজিষ্ট্রার এডি) নোটিশ প্রেরণ করতে হবে।
৩. বহুল প্রচারিত দৈনিক জাতীয় বাংলা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি আকারে নোটিশ জ্ঞাত করা যায়।
চেক ডিজঅনার মামলা একটি ফৌজদারী অপরাধ মামলা।
হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইনের ১৩৮ ধারা মোতাবেক যদি কোন চেক ব্যাংক কর্তৃক তহবিল না থাকার কারণে প্রত্যাখ্যাত হয় এবং আইনগত নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে চেকের অর্থ পরিশোধ না করা হয়, তখনই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, বলে ধরা হয়।
অর্থাৎ, শুধু চেক ডিজঅনার করে মামলা করা যাবে না। আইনি নোটিশ প্রেরণ করতে হবে।
চেকে লিখিত তারিখ হতে ০৬ মাসের মধ্যে বার বার চেক ডিজঅনার করা যায়। তবে, চেক ডিজঅনার ০৩( তিন) বার করাই যথেষ্ট।
হিসাবে টাকা আছে, স্বাক্ষর মেলে নাই, তাহলে কি হবেঃ
হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন ১৮৮১ এর ১৩৮ ধারায় কেবল পযাপ্ত তহবিল না থাকার কারণে মামলার কথা বলা হয়েছে। দন্ডবিধির ৪২০ ধারায় প্রতারণার মামলা করা যায় । তবে, দুইটি পৃথক পৃথক অপরাধ। প্রত্যেক অপরাধ স্বতন্ত্র। চেকের গ্রহীতা দুই আইনের যে কোন একটি ধারায় আইনের আশ্রয় গ্রহন করিতে পারে।
দন্ডবিধির ৪০৬/৪২০ ধারা অনুযায়ী থানায় মামলা দেওয়া যায়। তবে, এক্ষেত্রে, আসামীর শাস্তি হবে কিন্তু চেকের অর্থ বা টাকা আদায় করা যাবে না।
ডাক মারফত নোটিশ পাঠানোর ক্ষেত্রে আইনের বিধান হচ্ছে, নোটিশ ডাকে ফেলা মাত্র গ্রহীতার বিরুদ্ধে কায॔কর। চেক প্রদানকারীর সঠিক ঠিকানায় প্রাপ্তি স্বীকার পত্রসহ রেজিষ্ট্রার্ড ডাকযোগে নোটিশ প্রদান করা হলে, কোন কারণে প্রাপ্তি স্বীকার পত্র চেকের প্রাপক বা ধারকের নিকটফেরত না আসলেও চে ক প্রদানকারীর উপর সঠিকভাবে নোটিশ জারী করা হয়েছে মর্মে গণ্য হবে।
তারিখ লিখিত চেক উপস্থাপন করার পর যদি তাহা একাউন্ট বন্ধ মন্তব্যসহ চেক ফেরত আসলেও হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইনের ১৩৮ ধারার অপরাধ বলে গন্য হবে। অর্থাৎ হিসাব বন্ধ করলে বা বন্ধ হয়ে গেলেও চেক ডিজঅনার হবে।
পেঅর্ডার কি চেক হিসাবে গণ্য হবেঃ
হ্যা, পেঅর্ডার চেক হিসাবে গন্য হবে।
নোটিশে দেওয়া ৩০ (ত্রিশ) দিন শেষ হওয়ার আগে কি মামলা করা যাবেঃ
নোটিশে দেওয়া ৩০ দিন সময় শেস হওয়ার আগেও মামলা করা যেতে পারে। তবে, তা না করাই ভালো। আইন মোতাবেক মামলা করাই উত্তম।
একটি চেকের বিষয়ে কয়টি মামলা করা যাবেঃ
হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইনে একটি চেকের জন্য একটিই মোকদ্দমা দায়ের করা যায়।
চেক ডিজঅনার মামলায় আপীল করা যায় কিঃ
হস্তান্তরযোগ্য দলির আইন ১৮৮১ এর ১৩৮ ধারার অধীন প্রদত্ত দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে কোন আপীল করা যাবে না, যদি দন্ডাদেশ প্রদানকারী আদালতে প্রত্যাখ্যাত চেকে উল্লিখিত অংকের ৫০% অর্থ আপীল দায়েরের পূর্বে জমা না করা হয়। অর্থাৎ , চেকে উল্লিখিত অর্থের ৫০ ভাগ জমা দেওয়ার পর আপীল করা যাবে।